নদীর এক পাড়ের মানুষের সাথে অন্য পাড়ের মানুষের জীবনে নানা বৈচিত্র্য থাকে। জীবন জীবিকায় থাকে নানা পার্থক্য। ঠিক তেমনি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার ৪ ইউনিয়নের সাথে মধ্যম ও উত্তর রাঙ্গুনিয়ার মানুষের জীবন জীবিকায় ছিল নানা পার্থক্য। সড়ক কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মধ্যম ও উত্তর রাঙ্গুনিয়ার মানুষ তাদের কৃষি কাজে উৎপাদিত ফসল, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনের প্রত্যেকটা পর্যায়ে যে সুবিধা ভোগ করতে পারতো ঠিক তার বিপরীত ছিল দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার ৪ ইউনিয়নের। কারণ মধ্যম ও উত্তর রাঙ্গুনিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল সড়ক কেন্দ্রিক আর দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ায় নদী কেন্দ্রিক। উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার ৪ ইউনিয়ন সরফভাটা, শিলক, কোদালা ও পদুয়া ইউনিয়নবাসীর জীবন যাত্রায় ছিল বিরাট পার্থক্য। যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভাল না থাকায় এই ৪ ইউনিয়নের উৎপাদিত ফসল বাজারজাতের অভাবে পানির দামে বিক্রি করতে হতো। এলাকাবাসীদের শহর থেকে প্রয়োজনীয় মালামাল নদী পার করে নিতে খুবই অসুবিধা হতো। স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবিসহ সব শ্রেণী পেশার মানুষের নৌকায় চড়ে নদী পারাপারে মারাত্বক সমস্যা হতো। উপজেলার কর্ণফুলি নদীর দুই পাড়ের মানুষের এই দু’রকম গল্পের ভিন্নতা কমিয়েছে সরফভাটা গোডাউন সেতু। একটি সেতু পাল্টে দিয়েছে ৪ ইউনিয়নের জীবনমান। দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার ৪ ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র প্রধান মাধ্যম সরফভাটা শিলক কালিন্দীরানী সড়ক। উপজেলার ৪ ইউনিয়নের সাথে এটি একমাত্র সড়ক পথ। কর্ণফুলি সেতুর ফলেই ইতিমধ্যেই বৃহৎ পরিকল্পনার আওতায় নির্মিত হচ্ছে সরভাটা-চরনদ্বীপ ভান্ডালজুরি সড়ক। সড়কটি বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে রাঙ্গুনিয়া এই গোডাউন সেতু দিয়েই সহজে এবং কম খরচে যাওয়া যাবে চট্টগ্রাম শহর, কক্সবাজার, বান্দরবানসহ বিভিন্ন স্থানে।
জানা যায়, এক সময়ের খরস্রোতা কর্ণফুলী নদী রাঙ্গুনিয়ার অর্থনীতিতে রেখেছে বিরাট অবদান। সেই কর্ণফুলী নদী আজ বিপন্ন। নেই খরস্রোত। নেই নদীর পানির সেই ঐশ্বর্য। কমেছে নদীর গভীরতা। কর্ণফুলী নদীর বুকে জেগেছে একাধিক বিশাল চর। গত দশ বছর ধরে কর্ণফুলী নদী ধীরে ধীরে মরুভূমিতে রূপ নিচ্ছে। রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলী নদীর উপর গোডাউন সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু থেকে কর্ণফুলী নদীর এই প্রাকৃতিক পরিবর্তন শুরু হয়েছে। তৎকালীন সময়ে কর্ণফুলী নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ ছিল রাঙ্গুনিয়াবাসীর প্রাণের দাবি। তবে সেই সেতুটি কেমন হবে বা কোথায় হবে সে বিষয়টি তখন কারো জন্য মুখ্য ছিল না। তৎকালীন সরকারের রাজস্ব খাতের প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের ১৯৯৫ সালে নির্মান কাজ শুরু হলেও কাজের ধীরগতির কারনে দশ বছর পর সেতুটির নির্মানকাজ শেষ হয়।
সরফভাটা ভূমিরখীল এলাকার নাসির উদ্দিন মেম্বার(৮০) বলেন, এক সময় নদী পথে নৌকায় করে নদী পারাপার হতে এলাকার মানুষদের জন্য কষ্টকর ছিল। সেতু না থাকায় দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার উৎপাদিত ফসল পানির দরে বিক্রি করতে হয়েছিল। থানা প্রশাসন যথা সময়ে ঠিক সময়ে অভিযান চালাতে না পারায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ছিল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক অবকাঠামো সবদিকে পিছিয়ে ছিল দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার মানুষের জীবন। গোডাউন কর্ণফুলি নদীর উপর সেতু নির্মানের ফলে এলাকার সার্বিক চিত্র বদলে গেছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, এক সময় মূল উপজেলার সাথে রাঙ্গুনিয়ার ৪ ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা পিছিয়ে ছিল। কর্ণফুলি গোডাউন সেতুর নির্মানের ফলে এখন এসব ইউনিয়নের সার্বিক চিত্র বদলে গিয়েছি। সেতু কেন্দ্রিক সড়ক যোগাযোগ উন্নত হচ্ছে। গোডাউন থেকে সরফভাটা পর্যন্ত নতুন সড়কের নির্মানকাজ শেষের পথে সড়কটি নির্মান সম্পন্ন হলে এলাকার মানুষের জীবনমান বেড়ে যাবে ।